ঢাকা,শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪

চকরিয়ায় ভূমিহীন পরিবারের বসতঘরের জায়গা বিএনপি নেতার স্কুলের নামে বন্দোবস্ত আবেদন!

ovijogএম.জিয়াবুল হক, চকরিয়া ::

চকরিয়া উপজেলার কৈয়ারবিল ইউনিয়নের ইসলামনগর এলাকায় সরকারি ১নম্বর খাস খতিয়ানের জায়গায় ২৬বছর ধরে বসবাসরত ৫টি ভূমিহীন পরিবারকে উচ্ছেদের অপচেষ্ঠা চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি শহীদ হোছাইন চৌধুরী তাহার নিজ নামে গড়ে তোলা উচ্চ বিদ্যালয়ের নামে ইতোমধ্যে ওই ৫টি পরিবারের ভোগদখলীয় বসতভিটার ৫৪শতক জায়গা বন্দোবস্তমুলে বরাদ্দ পেতে জেলা প্রশাসনের কাছে আবেদন করেছে। এ ঘটনার পর থেকে ভুক্তভোগী পরিবার গুলোর মাঝে রীতিমত আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।

স্থানীয় সুত্রে অভিযোগ উঠেছে, ব্যক্তি নামে স্কুলটি প্রতিষ্ঠা করা হলেও প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনার ক্ষেত্রে কোন ধরণের সরকারি অনুমোদন নেই। এমনকি স্কুলটির নামে কোন ধরণের ভুমিও বরাদ্দ নেই। সরকারিভাবে নিয়মে আছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠা করতে হলে আগে নিজস্ব জমি থাকতে হবে। অথবা স্কুলের উদ্যোক্তাকে জমি দান করতে হবে। এ ক্ষেত্রে সরকারি সব ধরণের নিয়ম লঙ্গন করেছেন প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্টরা।

অভিযোগে ভূমিহীন পরিবার সমুহের গৃহকর্তা কৈয়ারবিল ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের ইসলামগর এলাকার ফয়জুল হক, নুরুল হোছাইন, আহমদ উল্লাহ, মোহাম্মদ ইলিয়াছ ও আবু তালেব দাবি করেন, ১৯৯১ সালে প্রলয়ংকারী ঘূর্নিঝড়ে তাদের বাড়িঘর বির্ধ্বস্ত হলে তাঁরা অপরাপর পরিবারের সাথে পৈত্রিক ভিটাবাড়ি হারিয়ে উপজেলার কৈয়ারবিল মৌজার ৪৪৭৭ দাগের ইসলামনগরস্থ ১নং খাস খতিয়ানের পাহাড়ি এলাকার ৫৪ শতক জায়গায় বসতি তৈরী ওইসময় থেকে পরিবার পরিজন নিয়ে শান্তিপুর্ণভাবে বসবাস করে আসছেন।

ভুক্তভোগী পরিবার সদস্যরা জানিয়েছেন, তাদের ভোগদখলে থাকা এসব জায়গা আর্দশ গ্রাম প্রকল্পের আওতায় বন্দোবস্ত পেতে তাঁরা ২০০৬ সালে যথাযথ নিয়ম অনুসরণ করে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের কাছে আবেদন করেন। আবেদনের প্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসকের নির্দেশে তৎকালীন চকরিয়া উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভুমি) তাঁর অফিসের সার্ভেয়ার দ্বারা ইসলামগর এলাকার পাহাড়ি জায়গা পরিমাপ ও বসবাসরত লোকজনের পরিচিতি চিহিৃত করেন। সেখানে ১০২ পরিবারকে জায়গায় দখলে থাকার বিষয়টি প্রতিবেদনে উপস্থাপন করা হয়।

ভুক্তভোগী পরিবার সদস্যরা জানান, তাদের বসতভিটার পাশে একই দাগের অধীনে ৩৬ শতক জায়গা অন্য দখলদার লোকজনের কাছ থেকে ক্রয় করে কৈয়ারবিল ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি শহীদ হোছাইন চৌধুরী ২০১২ সালের ২৬ মার্চ সেখানে তাঁর নামে একটি স্কুল গড়ে তুলেন। বর্তমানে ওই বিএনপি নেতা ও তাঁর ছেলেরা প্রভাব দেখিয়ে নানা কৌশলে স্কুলের নাম ভেঙ্গে ভুক্তভোগী ভুমিহীন পরিবার গুলোর দখলে বসতভিটা এবং বাড়িঘরের জায়গা দখলের জন্য অপচেষ্ঠা চালিয়ে আসছে বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা।

এরই জের ধরে সর্বশেষ ২০১৬ সালে এসে স্কুলের নামে তাঁদের জায়গাটি ফের বন্দোবস্ত পেতে জেলা প্রশাসনের কাছে আবেদন করেন বিএনপি নেতা শহীদ হোছাইন চৌধুরী। আবেদনের প্রেক্ষিতে ইতোমধ্যে উপজেলা সহকারি কমিশনার ভুমি (সদ্য বদলী হওয়া পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা) মোহাম্মদ মাহাবুব-উল করিম ঘটনাস্থল সরেজমিন পরির্দশন পুর্বক প্রতিবেদন তৈরী করেন। তাঁতে স্কুলের নামে আবেদন করা ওই দাগের জায়গায় ভুক্তভোগী পাঁচটি ভুমিহীন পরিবারের বসতি এবং জায়গা তাদের ভোগদখলে থাকার বিষয়টি প্রতীয়মান বলে চিহিৃত করা হয়। একই সাথে স্কুলের নামে ৩৬ শতক জায়গা থাকার বিষয়টিও তিনি উল্লেখ্য করেন।

ভুক্তভোগী আবু তালেব জানিয়েছেন, তাঁেদর পাঁচটি ভুমিহীন পরিবারের মধ্যে তার দখলে আছে ৩০ শতক ও অপর চারটি পরিবারের দখলে আছে ২৪ শতক জায়গা। ভুক্তভোগী পরিবার গুলোর অভিযোগ, বর্তমানে অভিযুক্ত বিএনপি নেতা শহীদ হোছাইন চৌধুরী, তার ছেলে আশরাফুল ইসলাম রাসেল ও রুবেল নানাভাবে দাপট দেখিয়ে তাঁদের পাঁচটি পরিবারের ভোগদখলী বসতভিটার ওই জায়গা শ্রেনী পরিবর্তনের মামলা করে জবরদখলের জন্য অপচেষ্ঠা চালাচ্ছে। এমনকি তাদেরকে ওই বসতি থেকে উচ্ছেদে দিব্যি হয়রাণি করে আসছে। এ অবস্থায় ভুক্তভোগী ৫টি পরিবার সদস্যদের মাঝে এ ঘটনায় রীতিমত আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। এব্যাপারে পরিবার গুলো শান্তিপুর্ণ বসবাস নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কাছে আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

পাঠকের মতামত: